শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৫ - ১৬:৫২
১২ দিনের যুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্বের হৃদয় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দিকে ঝুঁকেছে

ইরানের হাওজা ইলমিয়ার আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান বলেছেন: ১২ দিনের যুদ্ধের পর সারা বিশ্বের মন ও হৃদয় ইসলামী বিপ্লবের শুরুর সময়ের মতোই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। এমনকি সেই খ্রিস্টান জায়নিস্টরাও, যারা বলত যে জেরুসালেমে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং হযরত মসীহের আগমনের পথ সুগম করা “ঈশ্বরের ইচ্ছা”, এখন তারা প্রশ্ন করছে: “তাহলে ঈশ্বরের ইচ্ছা কী ছিল?” এবং কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ঈশ্বরের ইচ্ছা ইসরায়েলের হিফাজত নয়, বরং এর সম্পূর্ণ বিপরীত—তার সমাপ্তি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি, ইরানের হাওজা ইলমিয়ার আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মুফিদ হুসাইনি কোহসারি বালাগে মুবিন মিডিয়া কমিটি–র এক বৈঠকে হজরত ফাতিমা যাহরা (সা.)–এর শাহাদাতের দিনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ১৪৪৭ হিজরি সালকে “রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর জন্মের ১৫০০তম বছর” নামে পালনের বিষয়টি নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে এই শিরোনাম গঠনের ধাপসমূহ এবং এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্ত হন এবং ১৩ বছর মক্কায় অতিবাহিত করেন। সুতরাং যেসালে তিনি (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন, সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৫৩ বছর। এই বছরের বিশেষত্ব কী? যে বছরে নবী করীম (সা.) ৫৩ বছর বয়সে ছিলেন, সেই বছরই আমাদের তকওয়িমের বছর “শূন্য”। হিজরি তকওয়িম—চাই সেটি شمسی (সৌর) হোক বা قمری (চন্দ্র)—হিজরতের বছর থেকেই গণনা করা হয়। এ বছর ১৪৪৭ হিজরি। ১৪৪৭–এর সাথে ৫৩ যোগ করলে ১৫০০ হয়। এ হিসাব আসলে এখান থেকেই নেওয়া।

হুজ্জাতুল ইসলাম কোহসারি বলেন:
কীভাবে এই শিরোনাম এত দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত হলো? প্রথমে দেশের কিছু মানুষ বার্তা দিচ্ছিলেন যে, “১৪৪৭ সাল সম্ভবত রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর জন্মের ১৫০০তম বছর, আপনারা কি এ বিষয়ে কিছু করতে চান না?” এবং এসব সতর্কতা ও বার্তাই কাজের সূচনা করে। প্রথমে আমাদের দেখতে হয়েছিল, আমরা যে সহজ হিসাবটি উপস্থাপন করেছি তা গ্রহণযোগ্য কি না—অন্যরাও কি এই হিসাবকে সঠিক বলে মেনে নেয়?

ইরানের হাওজা ইলমিয়ার আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান আরও বলেন: এ বিষয়ে কাজ করা হয়েছে। যেহেতু বোঝা গিয়েছিল যে এটি আন্তর্জাতিক হতে পারে, তাই ইসলামী ও বৈশ্বিক ফোরামে এর গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল।

তিনি বলেন: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইসলামী বিশ্বের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি “জেদ্দা ফিকহী অ্যাসেম্বলি”র সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিপত্র চালাচালি করা হয়। তারা লিখিতভাবে উত্তর দেয়—হ্যাঁ, এটি সঠিক। এ বছরই রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর জন্মের ১৫০০তম বছর। এবং জেদ্দা ফিকহী অ্যাসেম্বলি সৌদি আরবে এটি অনুমোদন করে লিখেছে যে এ বছর রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো উচিত, অনুষ্ঠান আয়োজন করা উচিত এবং সমগ্র ইসলামী বিশ্বকে এ জন্য এগিয়ে আসা উচিত। জেদ্দা ফিকহী অ্যাসেম্বলির সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও ব্যাপক বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে।

হুজ্জাতুল ইসলাম কোহসারি বলেন: এটি একটি ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সুযোগ। বিবেচনায় রাখতে হবে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরবাঈন ও গাদিরের মতো অনুষ্ঠানসমূহ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা ও কার্যক্রম পরিকল্পনা করা অত্যাবশ্যক।

তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জায়নিস্টদের নৃশংসতা ও তার বিশ্বব্যাপী প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। ১২ দিনের যুদ্ধের পর—বিশেষ করে তুফানুল আকসা এবং গাজায় সংঘটিত ঘটনার পর—বিশ্বের প্রতি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা পৌঁছেছে, যা দুর্ভাগ্যবশত আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিইনি। সবাই বুঝেছে যে ইসরায়েল অত্যাচারী এবং ইতিহাসের বাতিল শক্তির সঙ্গে রয়েছে। এটি আলোচনা বা সংলাপ মেনে নেয় না; আন্তর্জাতিক আইন কিংবা ধর্মীয় নীতিমালার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল নয়। গাজায় নির্মম হামলার মতো বার্তা ইসরায়েলকে বিশ্বমঞ্চে লজ্জিত করেছে। জনমত থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সংস্থা পর্যন্ত সবাই প্রশ্ন করেছে: এর মানে কী? ৬০ হাজার মানুষ মারা গেছে! তাহলে জাতিসংঘ? হেগ কোর্ট? মানবাধিকার সংস্থা? তারা সবাই কী করছে?

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha